amp

কাজে ফাকি দেয়া

সুযোগ পেলেই কাজে ফাকিঁ দেয়া শুধু বাঙ্গালী নয়, পৃথিবীর প্রত্যেকটি জাতিতেই এ স্বভাব বিদ্যমান। অর্থাৎ, মানুষের স্বভাবসূলভ আচরণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো সুযোগ পেলেই কাজে ফাকি দেয়া। তবে, অনেক দেশেই তাদের আত্মীক ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে কাজে ফাকি দেয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যে জাতি বা দেশ কাজে ফাকি দেয়ার বিষয়টি পরিহার করতে সক্ষম হয়েছে তারাই আজ সারা পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক স্বাবলম্বী, উন্নত ও শক্তিধর হিসেবে প্রতিষ্টিত হতে পেরেছে। 

আমাদের বাংলাদেশে কর্মফাকি একটি ট্র্যাডিশন হয়ে দাড়িয়েছে। সমাজের সকল স্তরের সকল শ্রেণির চাকরিজীবীগণ নি:সংকোচে নিজ নিজ পদের অনুকূলে অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে তাদের পেশাগত জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। এর ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রয়েছে বহাল তবিয়্যতে এবং এদের সংখ্যা বরাবরই ভয়ংকর বলে উল্লেখ করা যায়। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে এদেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বদৌলতে কাজে ফাকি দেয়ার বিষয়টি কিছু কিছু করে কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এ সংখ্যা সত্যি তেমনভাবে উল্লেখ করার মত নয়। 

কাজে ফাকি দেয়া, দায়িত্ব পালনে অনীহা এমনকি অপারগতা প্রকাশ, দায়িত্বকে ক্ষমতায় রূপান্তর করে তার অপব্যবহার এমনকি সত্যিকারের দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত থাকার পেছনে কিছু বড় কারণ রয়েছে। যেমন: ১) দেশ বিরোধী শক্তির অনুপ্রবেশ ২) দলীয় কোন্দল ৩) ছন্নছাড়া সম্পর্ক ৪) অনুপযুক্ত কর্মপরিবেশ ৫) ওয়ার্ক ষ্টেশনে আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতির অভাব ইত্যাদি। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয়কাজে সবচেয়ে বেশি এরূপ ঘটে থাকে। কারন, গনতান্ত্রিক দেশগুলোতে সরকার আর বিরোধীদল একে অন্যের প্রতি পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতে সাচ্ছন্দ বোধ করে থাকে। এতে সরকারের অধীনে কর্মরত জনবলের মধ্যে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পক্ষ-বিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়ে থাকে। এতে সরকারের বিপক্ষে কর্মরত জনবলগণ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা থেকে বিরত থাকে। তারা, পরোক্ষভাবে কাজগুলোকে অধিক দীর্ঘস্থায়ী ও জট সৃষ্টিতে মত্ত থাকে। আর এর প্রভাব পরে সরকারের পক্ষের জনবলের উপর। ফলে তারা ইচ্ছা থাকলেও অধিক গতিতে কাজ করার কোন অবস্থা অবশিষ্ট থাকে না। এছাড়া, সরকারের পক্ষের জনবলগণ যতটা সম্ভব যোগ্যতার অধিক বা উর্ধ্বতনের দায়িত্বে চলতি দায়িত্ব নিয়ে নিজের র‌্যাংক বাড়াতে মরিয়া থাকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির অযোগ্যতা তীব্রভাবে প্রকাশ পায়। এতে ব্যক্তিগত-দপ্তরিক-রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে, এরুপ সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য যে কাজের যোগ্য তাকে সেই কাজের দায়িত্ব অর্পণ করাই হবে প্রকৃত সমাধান। তাতে সরকারের পক্ষে-বিপক্ষের বিষয়টি কোন প্রধান পাবেনা। 

ক মূলত: এদেশ স্বাধীনতা অর্জন করার দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও উন্নয়ন অগ্রগতি চোখে পরার মত নয়। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে নানাবিধ উন্নয়নমূলক গৃহীত পদক্ষেপের কারনে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ ব্যক্তিক উন্নয়নে বেশ প্রসার ঘটেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ  সময় পরে উন্নয়নের পথে হাটা কোন সুখকর বিষয় নয়। এর পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। তনন্মধ্যে প্রধান প্রধান কারনসমূহ হলো: ১) দেশ শাধীন হওয়ার কিছুদিনের মধ্যই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির হাতে এ দেশ পরিচালিত হওয়া; ২) উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত করা; অধিকারে অসমতা বিরাজ করা; যথাযথ কর্মপরিবেশ না থাকা; ভুল দায়িত্ব অর্পণ করা; স্বজনপ্রীতি অব্যাহত রাখা ইত্যাদি। কিন্তু এ কথা সত্য যে,  বিশেষ কোন প্রনোদনা, আর্থিক সহায়তা প্রদান, প্রশিক্ষণের সুযোগ, সঠিক কর্মপরিবেশ, যথাযথ দায়িত্বভার অর্পণ করার মাধ্যমে এ সমস্যা হতে উত্তরণ সম্ভব।

আত্মনিয়োগের সুযোগের অভাব এমনকি পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ না সত্ত্বেও জাতি হিসাবে বাঙ্গালী তুলনামূলকভাবে বিশ্বের যে কোন জাতির চেয়ে স্বল্পতম সময়ে সবচেয়ে বেশি উন্নতি লাভ করছে এবং দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হতে সক্ষম হয়েছে আন্তর্জাতিক যে কোন সমীক্ষা ও তুলনামূলক বিবরণী পর্যালোচনা করলে এর ভিন্ন কিছু মিলবেনা নিশ্চিত দিয়েই বলছি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, একজন কর্মী তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের প্রতি কখন ফাকি দেয়? কেন ফাকি দেয়? এই ফাকি দেওয়ার পেছনে বিশেষ কোন কারণ রয়েছে কিনা এসব বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্টকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ না করেই কর্মীর কাছে ফাকি দেয়ার বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এতে দু'টি বিষয় পরিস্কার বলা যায় যে, কোন বিশেষ কারণ ছাড়া কোন কর্মীর কাজে ফাকি দেওয়ার কথা নয়। নিশ্চয় তা বিশেষ কারণই বটে। তা হতে পারে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এমনকি নিজ কর্মস্থল বিষয়ক কিছু। এটা ভাববার বিষয়। কি কারনে এরূপ ফাকি দেয়া হয়েছে সে জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যাখ্যা জানানোর জন্য কারণ দর্শাণো নোটিশ প্রদান করাই এখানে মূল বিষয়টি উৎঘাটিত হওয়ার কোন প্রকার সম্ভাবনা নেই মর্মে আমি মনে করি। মানুষের মন এমনিতেই বিচিত্র প্রকৃতির। তার কারনও বিচিত্র হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব কারন দর্শাণো নোটিশের উত্তরও গতানুগতিক রীতি অনুযায়ীই হয়ে থাকে। এতে যেমন লু্ক্কায়িতই রয়ে গেলো মূল কারণ, অন্যদিকে কর্মীর কাজে ফাকি দেয়ার মূল কারণ যদি কোন মানষিক বা হতাশমূলক এমনকি ক্ষতিকরক কিছু হয়ে থাকে তাহলে নির্ঘাত আলোচ্য কারন দর্শানো নোটিশের মাধ্যমে তাকে মানষিকভাবে আরও বিপর্যস্ত করা হলো। এতে প্রকারান্তরে কাজে ফাকি দেয়ার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা বৈ আর কিছুই করা হলো না। কোন প্রকার ভাবনা চিন্তা ছাড়াই এরূপ কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা সমীচীন নয় মর্মে উল্লেখ করা যেতে পারে। এরূপ কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা প্রদান করা হলেও অগোচরে বিশেষ ব্যবস্থায় মূল কারণ উৎঘাটনে প্রতিষ্ঠানকে সমতালে উদ্যোগ নেয়া উচিত। কেউ কোন কারন ছাড়া ফাকি দেয়ার কথা নয়। নিশ্চয়ই সিনেমা দেখতে কেউ ফাকি দেয়না। গল্প করতে কিংবা আড্ডা দিতেও কেউ ফাকি দেয়না। একজন কর্মীর মধ্যে ঠিক তখনি কাজে ফাকি দেয়ার প্রবনতা দেখা যায় যখন তার কাজে পছন্দের কোন বিষয়ই আর অবশিষ্ট না থাকে। এজন্য কর্মীর উপযুক্ত কর্মপরিবেশের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একশ্রেণির মালিক কিংবা নিয়োগদাতা কর্তৃক কর্মীর কর্মপরিবেশের বিষয়টি নিশ্চিত না হয়েই ১০০ ভাগ কাজ আদায় করার প্রবণতা আমারদের দেশে পরিলক্ষিত হয়। এরূপ প্রায় প্রত্যেক দেশেই বিদ্যমান। এ বিষয়টি একপাক্ষিক ও অযৌক্তিকও বটে। এখানে স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বলে কোন কথা নয়। কর্মীর পারিশ্রমিক নির্ধারণ হওয়া উচিত অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত মান অনুসারে। শুধু মে দিবস ছাড়া পারিশ্রমিক নিয়ে বিশেষ কিছুই আলোচনা হয় না এদেশে। এছাড়া, আইএলও নির্ধারিত শ্রম আইন লঙ্ঘিত হলো কিনা সেটাতো অনেক পরের বিষয়ই থেকে যাচ্ছে।

হুট করে কর্মী ছাটাই করে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই স্বল্প বেতনে পুনরায় কর্মী নিয়োগ দেয়া এবং এধরণের কার্যক্রমকে লাভজনক বলে আখ্যায়িত করা নিছক প্রতারণা বৈ কিছুই নয় এরূপ আচরণ কখনোই কোন ভাল মানের প্রতিষ্ঠানের কাজ হতে পারে না। প্রতিষ্ঠানে কর্মী কাজে ফাকি দিচ্ছে কেন তা চিহ্নিতকরণপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়াই যুক্তিসঙ্গত। বাংলাদেশে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল অনুসরণপূর্বক অফিস ব্যবস্থাপনা বিষয়টির গুরুত্ব প্রতিষ্ঠানকে যেমন অনুধাবন করতে হবে ঠিক তেমনি কর্মীরও তার করণী বিষয়সমূহ অনুধাবন করাই শ্রেয়। 
১। এমপ্লয়ী'র কর্মপরিবেশ
২। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ
৩। প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সঠিক কাজে দায়িত্ব প্রদান ও
৪।  কাজের চাহিদানুযায়ী অন্যান্য আসবাব ও যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করা এবং
৫। ভুল হলে বুঝিয়ে দেয়া, প্রয়োজনে সময় নিয়ে ভালভাবে বুঝানো

এসব না করে ছাটাই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। মনে রাখা ভাল- সব চাকরিরই একটা ডেসক্রিপশন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানভেদে আইন, বিধি, প্রবিধি রয়েছে। কেউ ভুল করলে বা অসদাচরণ করলে কিংবা অমনযোগী হলে তার জন্য বিধান রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের বিধান। কিন্তু কোন ভাবেই উচ্চস্বরে ধমকানো, ত্বারস্বরে বকুনি, মারমুখী আচরণ, মারধর, হুটহাট ছাটাই কোন ক্রমেই বিধিসম্মত ও কাম্য নয়।

বিধান মতে কাজে ফাকি দিলে এমপ্লয়ী’কে বুঝিয়ে বলা উচিততাতে কাজ না হলে সতর্ক করা যেতে পারেপ্রয়োজন হলে কাজে ফাকি বা দায়িত্বে অবহেলার জন্য কারণ দর্শানের জন্য নোটিশ দেয়া যায়। অন্যায় অনুযায়ী দাপ্তরিকভাবে বিভাগীয় মামলা করা যায়ক্ষেত্র বিশেষে অর্থদন্ডে দন্ডিত করা, কিংবা অন্যায় পরিধি বুঝে ফৌজদারি আইনে মামলা করা, সাময়িক বরখাস্ত করা, অন্যায়ের বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে চাকরি হতে এমপ্লয়ী’কে বরখাস্ত করার বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বলে কোন তফাৎ রাখা কোন ভাবেই সমীচীন নয়।

এটুকু ভাবা উচিৎ যে, ছাটাইকৃত ব্যক্তির নিকট চাকরিটা যেমন একটা জীবীকা তেমনি ছাটাইকারী ব্যক্তির জীবীকাও নির্ভর করছে সেই ছাটাইকৃত এমপ্লয়ীর পারফরমেন্স-এর ওপর। সুতরাং বারবার হুটহাট ছাটাই করার চেয়ে সঠিক কর্মপরিবেশ তৈরী করে এমপ্লয়ী’র সাথে বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করলে উভয়ের জন্যই সফল হওয়া অবশ্যই সম্ভব। আরেকটি বিষয় না উল্লেখ করলেই নয়, যখন-তখন এমপ্লয়ী ছাটাইকারী প্রতিষ্ঠান আর যা-ই হোক কখনো উত্তম প্রকৃতির প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। এসব সিদ্ধান্ত যেমন হঠকারী ও অদুরদর্শী সিদ্ধান্ত ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠানের রূপরেখা অপরিপক্ক এবং এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত তা ভাল করেই বলে দেয়া যায়।

একজন এমপ্লয়ী’র যেমন ভুল হতেই পারে এবং এটা যেমন একটি সত্য বিষয়, তেমননি তার সঠিক কাজে প্রসংশা করাও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানুষ মাত্রই প্রসংশিত হওয়া স্বাভাবিক সাধরণত প্রত্যেকেই প্রসংশার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে কাজে প্রসংশা না পেয়ে শুধু তিরস্কৃত হলে এমপ্লয়ী’র ফাকি দেয়া স্বাভাবিক বিষয় কাজের পরিবেশ, উপকরণ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয় অবশ্যই কর্মীবান্ধব হতে হবে। একটা নরমাল পিসি দিয়ে যদি গেইম তৈরীর জন্য ভালমানের ইঞ্জিনিয়ারও বসিয়ে দেয়া হয় তাতে তার উপযোগিতা আর কি আশা করা যায়কোন ভাবে ফাকি দেয়ার বিষয়টি আসার সম্ভাবনা নেই মর্মে নিশ্চিত করেই বলা যায়

Comments

Popular posts from this blog

Chikungunya -Fact sheet

অসমাপ্ত কবিতা

সফল হতে নিজেকে নিচের ৯টি প্রশ্ন করতে পারেন, প্রতিদিন